নিয়মিত বিভাগসমূহের পাশপাশি রয়েছে কয়েকটি সহযোগী বিভাগ। জামিয়ার চিন্তা-চেতনার সফল বাস্তবায়ন এবং নিয়মিত বিভাগসমূহকে সহযোগিতা করাই হচ্ছে এসব বিভাগের কাজ। নিম্নে এগুলোর ফিরিস্তি তুলে ধরা হলো
তাদরীবুল আরাবী
মুসলমানদের জাতীয় ভাষা আরবী। কুরআনের ভাষাও আরবী। ইলমে ওহীর প্রধান ভাষা আরবী। জামিয়ার শিক্ষামাধ্যমও আরবী। আরবী ভাষা শিক্ষায় এখানে নিয়মিত বিভাগের পাশাপাশি প্রতিদিন আসরের পর দক্ষ প্রশিক্ষকের দ্বারা আরাবী ভাষার প্রায়োগিক প্রশিক্ষণ হয়। এই বিভাগের মাধ্যমে ছাত্রদেরকে আরবী লেখার পাশাপাশি অনর্গল আরবী বলারও প্রশিক্ষণও দেয়া হয়। প্রতি বছর ঈদুল-আযহার আগেরদিন তাদরীবের পক্ষ থেকে আরবী সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
সাহিত্য প্রশিক্ষণ বিভাগ
সাহিত্য জাতির দর্পন। সাহিত্যের মাধ্যমে ইসলামের ব্যাপক খেদমত হয়। নিজে যা জানো, অন্যকে জানাও- এটাই হচ্ছে ইসলামের শিক্ষা। জানানোর শক্তিশালী মাধ্যম হচ্ছে সাহিত্য। জামেয়া সাহিত্য চর্চায় বরাবরই গুরূত্ব দিয়ে আসছে। ছাত্রদেরকে প্রশিক্ষণ দিতে আল হিলাল ছাত্র সংসদের সাহিত্যবিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে জামেয়া থেকে শক্তিমান লেখক-সাহিত্যিক বের হচ্ছেন। এদের দ্বারা ইসলাম ও দেশের ব্যাপক খেদমত হচ্ছে।
বক্তৃতা প্রশিক্ষণ বিভাগ
সুবক্তা তৈরিতেও জামেয়া অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী । জামিয়ায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বক্তারা ঘন্টার পর ঘন্টা অনর্গল বক্তব্য দিতে পারেন। বিভিন্ন টিভি-চ্যানেলে ইসলামী অনুষ্ঠানে জামিয়ার ছাত্ররা আলোচক হিসেবে আমন্ত্রিত হন। সাবলিল ভঙ্গিমায় চমৎকার উপস্থাপনায় যে কোনো কঠিন বিষয় সহজভাবে তুলে ধরতে ওস্তাদ তাঁরা। এই বিভাগে জামিয়ার ছাত্ররা দেশ-বিদেশে বেশ সুনামও কুড়িয়েছে। প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার ৬টি বিভাগে আরবি-বাংলা বক্তৃতা প্রশিক্ষণ হয়ে থাকে।
কুতুবখানা বিভাগ
জামিয়ার রয়েছে একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থশালা। এতে রয়েছে মূল্যবান হাজারো বিরল কিতাবের বিশাল মজুত। স্তরে স্তরে সাজানো হয়েছে তাফসীর, উলূমুল-কুরআন, হাদীস, উসূলুল-হাদীস, ফিক্বহ, উসূলুল-ফিক্বহ, আক্বাইদ, ফারাইজ, ইতিহাস, আরাবী সাহিত্য, বালাগাহ, আরাবী ব্যাকরণ- নাহু- সারফ, যুক্তিবিদ্যা, জীবনী, সীরাত, রিজাল, রাজনীতি ও অর্থনীতিসহ ধর্মীয় এবং জাগতিক বিশটি শাস্ত্রের প্রায় ১৫হাজার মূল্যবান কিতাব। বৎসরের শুরুতে গরীব ছাত্রদেরকে কুতুবখানা থেকে কিতাব সরবরাহ করা হয়। এই বিভাগের দায়িত্বে থাকেন দুইজন উস্তায। বিভাগীয় প্রধানকে নাযিমে মাকতাবাহ বলা হয়।
প্রকাশনা বিভাগ
ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা মানুষের সামনে তুলে ধরতে জামিয়ার রয়েছে একটি শক্তিশালী প্রকাশনা বিভাগ। এখান থেকে নিয়মিত গুরূত্বপূর্ণ প্রকাশনা পাবলিশ্ড হয়। হকের দাওয়াত দেয়া হয়, বাতিলের মুখোশ উন্মোচন করা হয়। এই বিভাগ থেকে নিয়মিত বার্ষিক ম্যাগাজিন আল-হিলাল বের হয়। এ পর্যন্ত আল-হিলালের ৩১ টি নিয়মিত সংখ্যা বের হয়েছে। বার্ষিক ম্যাগাজিনের পাশাপাশি প্রকাশনা বিভাগের অধীনে রয়েছে দুটি ত্রৈমাসিক দেয়ালপত্রিকা। আল-ফারুক নামে একটি বাংলা, এবং আল-ফুরক্বান নামে একটি আরবি দেয়ালিকা প্রতি তিনমাস অন্তর অন্তর বের হয়। ১৪০৯ হিজরী থেকে দেয়ালিকার যাত্রা শুরু হয়। এছাড়া প্রতি বছর বার্ষিক মাহফিলের সময় শিহাবী পয়গাম নামে একটি বাংলা এবং আশ-শিহাবুস সাক্বিব নামে একটি আরবি ক্রোড়পত্র বের হয়। তাছাড়াও বিভিন্ন ধর্মীয় ও জাতীয় দিবস এবং জামিয়ার বিভিন্ন বড় বড় সম্মেলনে বিভিন্ন সাময়িকী এবং স্মারকগ্রন্থ বের হয়ে থাকে।
বোর্ডিং বিভাগ
১৪০৩ হিজরিতে এই বিভাগ খোলা হয়। দারুল ইক্বামা বা ছাত্রাবাসের তাবৎ জিম্মা এই বিভাগের হাতে। আবাসিক ব্যবস্থাপনা, মাতবাখ, ক্লাসটাইমের বাইরে ছাত্রদের তদারকি- এসবই এ বিভাগ করে থাকে। একজন বিভাগীয় প্রধান ও কয়েকজন সহযোগী থাকেন। বিভাগীয় প্রধানকে নাযিমে দারুল ইক্বামা বা বোর্ডিং সুপার বলা হয়। বর্তমানে ১৯ জন শিক্ষক এবং প্রায় আটশত ছাত্র বোর্ডিংয়ে অবস্থান করছেন।
দারুল ইকামা
কম্পিউটার প্রশিক্ষণ বিভাগ
বর্তমানে পৃথিবীতে কম্পিউটারের শাসন চলছে। সমগ্র দুনিয়া এখন আশ্রয় নিয়েছে কম্পিউটারের ভেতর। জামিয়া যুগ-চাহিদার এ দিকটি গুরূত্বের সাথে বিবেচনা করেছে। ১৪২৮ হিজরী থেকে জামিয়ায় কম্পিউটার প্রশিক্ষণের জন্য নিয়মিত একটি বিভাগ চালু করা হয়। দুজন দক্ষ প্রশিক্ষকের মাধ্যমে জামিয়ার শিক্ষার্থীরা কম্পিউটারের প্রায়োগিক শিক্ষা অর্জন করে থাকে।
আল-মুহাযারাতুল ইলমিয়্যাহ
সপ্তাহে দুদিন বাছাই করা মেধাবী ছাত্রদের নিয়ে ইলমী মাজলিস বসে। নির্দিষ্ট একটি বিষয়ে গবেষণাধর্মী আলোচনা এখানে হয়। সূক্ষ্ম জটিল অনেক বিষয়, মনীষীদের অনেকের জীবনী, সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখানে আলোচিত হয়।
সহযোগী তানযীম
জামিয়ার কার্যক্রম সঠিকভাবে আঞ্জাম দিতে বেশ কয়েকটি সহযোগী সংগঠন তৎপর রযেছে। এগুলোর মাধ্যমে জামিয়া অল্পদিনেই তার শিক্ষা বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। তানযীমগুলো হলো- আশ শিহাব পরিষদ, আল হিলাল ছাত্র সংসদ, ইক্বরা ফাউন্ডেশন ইউকে, আশ শিহাব পরিষদ ইউকে, আশ শিহাব পরিষদ ইউএসএ, আশ শিহাব পরিষদ কাতার, আসহাবে বায়আতে রিযওয়ান, শিক্ষক কল্যাণ ফান্ড।